ফরিদ কবির : [১] বইমেলায় যতো লোক আসছে, আমার ধারণা তার মাত্র ১ শতাংশ লোক বই কিনছে! আমি অবশ্য এতে শঙ্কিত নই। এবারের বইমেলায় শুরু থেকেই প্রচুর লোক আসছে, বই উল্টেপাল্টে দেখছে- এমন দৃশ্য আমার কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একদিন এদের মধ্য থেকে নিশ্চয়ই অনেকে পাঠকে পরিণত হবেন। 

[২] আমাদের সময়ে বেছে বেছে ভালো বই কেনার যে চল ছিলো এখন তার কিছুটা বদল চোখে পড়ছে! সোশাল মিডিয়ায় প্রচার-প্রচারণার বদৌলতে 'ফেসবুক সেলিব্রিটি'দের বই অপেক্ষাকৃত বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে আমার ধারণা! ভালো লেখেন অথচ ফেসবুকে তেমন সরব নন, এমন লেখকদের বই তুলনায় বিক্রি হচ্ছে কম। 

এদেশে প্রকাশনাশিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই বইয়ের প্রচার-প্রচারণায় আলাদা কোনো বাজেট রাখেন না। যারা টুকটাক বইয়ের প্রচারে খরচ করেন তারাও জানেন না, ঠিক কোন বইয়ের কী রকম প্রচার দরকার, কতোটা করা দরকার। সব মিলিয়ে হাজার হাজার বইয়ের মধ্য থেকে তাই ভালো বই খোঁজার বিষয়টি ঘাসের মধ্য থেকে সুঁই খুঁজে বের করার মতোই। যেমন আমিও জানি না, কার কার বই বেরোচ্ছে, সেগুলোর মধ্য থেকে কোন বইগুলো আমার কেনা অপরিহার্য। আমার কবি-লেখকবন্ধুদের নতুন বই কেনার একটা বাজেট আমার থাকেই। তাদের বইয়ের খোঁজ আমি কোনো না কোনোভাবে পেয়েও গেছি! কিন্তু এর বাইরেও আমার পড়া দরকার- এমন বইয়ের খোঁজ আমি এখনো পাইনি। সাহিত্যের বাইরে ইতিহাস, রাজনীতি ও দর্শন ছাড়াও চিত্রকলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে। এসব বিষয়ে কী বই কোত্থেকে বেরোচ্ছে, আমি সত্যিই জানি না। 

সংবাদপত্রগুলোও ভালো বইয়ের সন্ধান দিতে অক্ষম। সেখানেও প্রচার পায় সংশ্লিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক-বার্তা সম্পাদক বা সাহিত্য সম্পাদকদের  ঘনিষ্ঠ লেখকদের বই-ই। তাতে দু'-চারটা ভালো বইয়ের খবর থাকলেও তা এমনভাবে আজেবাজে বইয়ের সঙ্গে মিশে থাকে যে সেগুলোকে আলাদা করাই মুশকিল। 

ভালো বই নিয়ে কেউ ফেসবুকে লিখবেন, এমন আশা করাও কঠিন। কারণ এরও বিপদ আছে।  যাদের বই সেই তালিকায় বাদ পড়বে, তারা খুবই রুষ্ট হবেন। এর কারণ, সকল কবি-লেখকই মনে করেন তিনি অসাধারণ কিছু লিখে ফেলেছেন! এমনকি নবীন কবি- লেখকদের মধ্যেও এই মানসিকতা জেঁকে বসেছে। ৩. সকলেই যেমন কবি নন, সকলেই লেখকও নন। এমনকি পাঠকও কেউ কেউ। সকলে নন। লেখক: কবি। ফেসবুক থেকে